ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আলীকদমে অপ্রতিরোধ্য পাথর পাচার, নিরব প্রশাসন

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান প্রতিনিধি ঃ
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে পাহাড় কেটে ও কোটি টাকার গ্রামীণ অবকাঠামোর রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নষ্ট করে চলছে পাথর উত্তোলন ও পাচার। উপজেলা সদর সহ আশপাশ থেকে অবৈধভাবে পাথর আহরণ ও প্রকাশ্য দিবালোকে পাচার হলেও দেখার কেউ নেই। ইতিমধ্যে পাচারের জন্য কয়েকটি পয়েন্টে লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর মজুদ করা হয়েছে।
অপরদিকে আলীকদম উপজেলায় পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনের কোন পারমিট দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক। তিনি জানান, কয়েকটি আবেদন আমাদের কাছে এসেছে। আবেদন গুলো যাচাই বাচাই করে যুক্তিক হলে অনুমোদন দেয়া হবে।
সরজমিনে গেলে দেখা যায়, আলীকদম-থানচি সড়ক, চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের পাট্টাখাইয়া সড়কের পথে পথে পাথরের স্তুপ, চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ভরিখাল, কলারঝিরির শাখা প্রশাখা, রেপারপাড়া এলাকার ডপ্রু ঝিরি, চিনারি দোকান এলাকার ভরিমুখ ও মমপাখই হেডম্যান পাড়া থেকে সরকারি অনুমতি ছাড়াই নির্বিচারে পাথর আহরণ করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এইসব পয়েন্টে কমপক্ষে লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর মজুদ করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, এই উত্তোলনকৃত অধিকাংশ পাথর বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকা থেকে তোলা। অবাধে পাথর আহরণের কারণে গ্রামীণ অবকাঠামোর রাস্তা ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট গুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। এই পাথর সিন্ডিকেটের সাথে সরকারি কিছু কর্মচারী ও স্কুল শিক্ষক জড়িত রয়েছে। পাথর ব্যবসায়ীদের সাথে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের সখ্যতার কারণে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে জানায় স্থানীয়রা। এছাড়া সরকারী একটি বিশেষ বাহিনীর বড় একটি উন্নয়ন কাজকে পুঁজি করে পাথর ব্যবসায়ীরা আলীকদমে অবৈধ পাথর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আলীকদম উপজেলায় পাথর আহরণের কোন পারমিট দেয়া হয়নি। জনৈক হুমায়ুন কবির নামে লামা ফাঁসিয়াখালী এলাকার এক ব্যবসায়ী উপজেলার ২৮৭নং তৈন মৌজার ছোট ভরি, বড় ভরি, ঠান্ডা ঝিরি, মাংগু ঝিরির শাখা প্রশাখা থেকে ভাসমান ২০ হাজার ঘনফুট পাথরের আবেদন করে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের কাছে। আবেদনটি যাচাই বাচাই করতে আমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। এবিষয়ে বন বিভাগের কোন আপত্তি আছে কিনা, জানতে তাদের মতামত চাওয়া হয়েছে। বন বিভাগের অভিযোগ না থাকলে আবেদনটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হবে। কিন্তু পাথর উত্তোলনের অনুমোদন হাতে না পাওয়ার আগেই উক্ত এলাকায় আবেদনের তিন গুণ পাথর আহরণ করা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ছোট ভরি, বড় ভরি, ঠান্ডা ঝিরি, মাংগু ঝিরির এলাকার লোকজন। তারা আরো জানান, এখানে কোথাও ভাসমান পাথর নেই। মোটা টাকা লেনদেনের বিনিময়ে কানুনগো, সার্ভেয়ার এর ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে পারমিট হাতিয়ে নেয় ব্যবসায়ীরা। তারপর ভাসমান পাথরের কথা বলে চলে পাহাড় কেটে পাথর আহরণ।
উপজেলার কয়েকজন পরিবেশবাদী জানান, মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন নামমাত্র পাথর জব্দ করে নিলাম দেয়। নিলামের কাগজে পাথর পরিবহনের সময়সীমা অযুক্তিক ভাবে দীর্ঘ করে দেয়া হয়। এতে করে উক্ত নিলাম গ্রহিতারা এই কাগজ প্রদর্শন করে নিলামের ২০ গুণ পাথর নিয়ে যায়। আলীকদম থানচি সড়কে ৪০ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করে নিলামে তা পরিবহনের জন্য ৬ মাস সময় দেয়া হয়েছে। বিষয়টি একদিকে দুঃখজনক অন্য দিকে পাথর খেকোদের উৎসাহ দেয়ার মত।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আলীকদম সদর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন মাতামুহুরী নদীর শাখা ঝিরি ছোট বুঝি, কালাইয়ার ছড়া ঝিরি থেকে ২০ হাজার ঘনফুট এবং নয়া পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফোগ্য মার্মা রোয়াম্ভু খালের নুন ঝিরি ও কেয়াং ঝিরি হতে ২০ হাজার ঘনফুট পাথর পারমিট পেতে আবেদন করেছেন। এইসব আবেদন গুলো অনুমোদন দেয়া হলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল সহ এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হবে জানায় বসবাসরত উপজাতি বাঙ্গালীরা। আলীকদম সদর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, আমি ২০ হাজার ঘনফুট পাথরের আবেদন করেছি। অনুমোদন পেতে পাথর সংগ্রহ করা হবে।
লামা-আলীকদম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমদ জানান, আবেদিত স্থান গুলো আমার বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে পড়ায় উক্ত জায়গা থেকে পাথর উত্তোলনের সম্ভব নয় বলে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
এবিষয়ে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, উল্লেখিত স্থানে মজুদকৃত পাথরের অনুমোদন রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন পারমিট প্রদান করা হবেনা।

পাঠকের মতামত: